২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া Zomato এর প্রতি মাসে অ্যাপ এবং ওয়েব ভিজিট হয় ২২ কোটি প্লাস এবং তাদের এক্টিভ ইউজার প্রায়ই ৭ কোটি। ২০১৪ সালের শেষের দিকে Zomato সিধান্ত নিলো তারা সারা রাত ফুড ডেলিভারি করবে।
দারুন কিছু অবশ্যই!! কিন্তু তাদের দরকার ছিল একটা গ্রোথ হ্যাকের যাতে তাদের এই রাতের অর্ডার বেড়ে যায়। তারা নতুন নতুন অফার, ফ্রি ডেলিভারি আরও অনেক কিছু করেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না।
প্রমোদ রাও (ভিপি মার্কেটিং) বুঝতে পারলেন তাদের এই রাতের ফুড ডেলিভারি ব্যাপারটা জমাতে হলে এমন কিছু করা লাগবে যা টু দ্যা পয়েন্ট হয়। এমন হয় প্রমোদ নিউজ প্যাপারে দেখতে গেলো ইন্ডিয়া পর্ণ দেখাতে গোটা দুনিয়ায় ২য়, আগের কিছু বছরে প্রথমও হয়েছিল। তার মাথায় আইডিয়া এলো কিছু।
প্রমোদ সেই আইডিয়া শুনালো দিপেন্দার কে (ফাউন্ডার অফ Zomato)। দিপেন্দার শুনে বলল আইডিয়া ভাল কিন্তু এভাবে করে কয়দিন তুমি ট্র্যাফিক নিয়ে আসবে। তখন প্রমোদ নিয়ে এলো তার বুদ্ধি।
প্রমোদ বলল পর্ণ কেউ দিনের বেলা দেখবে না, একটা গবেষণায় দেখা যায় ভারতের শহর গুলোতে পর্ণ দেখা শুরু হয় রাত ১ টার পর থেকে আর সেটা মাঝে মাঝে ভোর পর্যন্ত। আমরা সারা বছর এই ক্যাম্পেইন চালাতেও পারবো না এটাও সত্য কিন্তু আমাদের রাতের ফুড ডেলিভারি যদি কেউ একবার নেয় সে রেগুলার হয়ে যাবার চান্স অনেক হাই তাই আমাদের টার্গেট থাকবে ১০ দিনে য বেশী সম্ভব Acquisition নেয়া। আর এই অর্ডার গুলোকে আমরা বিশেষ ট্রাকিং এ রাখব কারণ ৩০ দিন পড়ে আমরা পর্ণ সাইটে আর অ্যাড দিব না– তখন আমরা ডাটা পেয়ে যাচ্ছি যে রাতে কারা জেগে থাকে আর কারা অর্ডার করতে আগ্রহী!!
ব্যস, যেমন কথা তেমন প্ল্যান!!! ২০১৫ সালের মার্চ মাসে Zomato পর্ণ সাইট জরিপ থেকে বেস্ট প্পুলার মানে যেই সাইট গুলোতে ইন্ডিয়ান ট্র্যাফিক বেশী থাকে সেই সাইট গুলো বেঁছে নেয়। আর পর্ণ সাইটের ট্র্যাফিক কস্ট তারা কমে পাবে সেটা তারা আগেই বুঝতে পেরেছিল। যদিও Traffic Junkey দিয়ে সেটা করা যেত কিন্তু তারা ডিরেক্ট কিছু করেছিল।
মজার ব্যাপার হল ক্যাম্পেইন লঞ্চ করার ২য় দিনে তাদের সার্ভার ডাউন হবার অবস্থা হয়েছিল। কারণ রাতে এমন কিছু হবে তারা বুঝতে পারেনি। এমনও ছিল এক রাতে মিলিওন ক্লিক্স তারা পেয়েছে অ্যাডস এ। বুঝতে পারছেন কত কত নিউ অর্ডার আর ডাটা Zomato গ্রাভ করেছে সেই ৩০ দিনের প্ল্যান থেকে।
কিন্তু এইটা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সুশীল সমাজে কথা শুরু হয়ে যায় মানে ক্যাম্পেইনের ১০ম দিনে। ততদিনে Zomato নিউ Acquisition করে ফেলেছে হিউজ। Zomato ভাবল এখন যদি তারা পর্ণ সাইটে অ্যাড অপ্স বন্ধ করেও দেয় তাতেও কোন সমস্যা নেই কারণ তাদের রাতের ফুড ডেলিভারি নিয়ে যা দরকার ছিল তা অর্জন হয়ে গেছে প্রায়ই। তাই ১৪তম দিনের মাথায় এসে Zomato পর্ণ সাইটে তাদের অ্যাড অপ্স অফ করে দেয়।
খুব মজার ইন্সাইট Zomato ম্যানেজ করে নিয়েছিল এই ক্যাম্পেইন থেকে আর সেটা হল কারা রাত জাগে আর তাদের রাতে কি কি খেতে ইচ্ছে করে সেই ডাটা। এক কোটি রাতের ফুড অর্ডার কাস্টমার কে দিয়ে তারা পড়ে আরও ৭০ লক্ষ কাস্টমার পেয়ে যায়।
ফান্ডিং নিয়ে যারা কাজ করবেন ভাবছেন তাদের বলবো নাম্বারস নিয়ে কথা বলেন হালাল সাবানের মার্কেটিং ৯০ এর যুগে চলছে কিন্তু এখন চলবে এমন কিছু যা ডোপেমেন থেকে আসে। আমি ইন্ডিয়ান বেশ কিছু পেইড মার্কেটিং ফোরামের মেম্বার হয়েছি শুধু তাদের আলোচনা শুনতে। আমি বলছিনা ইন্ডিয়াতে যা চলে তাই আআমদের দেশে চল্বেই তবে অনেক খানি ইম্প্যাক্ট পড়ে বস!
নেক্সট একটা কেস নিয়ে আজ আলোচনা করবে নন্দি ওঝা নামক এক গ্রোথ হ্যাকার সেখানে দেখবো কীভাবে ইনফ্লুয়েন্সারকে কাজে লাগিয়ে ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডগুলো তার প্রোডাক্টকে কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে আর রিটেইন করাচ্ছে।
সত্য বলতে উপরের Zomato এর মত একটা কাজ একদা আমিও করেছিলাম আর সেটার আরওআই ছিল ২২০%। আপনি যখন ব্র্যান্ডকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চান এর মানে হচ্ছে আপনি কাস্টমারের মাইন্ডে জায়গা করতে চান কিন্তু মাথায় রাখবেন সেই কাস্টমারের চিন্তা প্রসেসটা কি আর সেই জন্য আপনার বায়ার পারসোনাকে অনেক ভাল ভাবে এনালাইসিস করে আপনি মিডিয়া চুজ করবেন।
২০২১ সালে এসেও যদি আপনি গল্পের সাথে অঙ্ককে খুঁজে বের করতে না পারেন তাহলে উপন্যাস লিখেন কিন্তু মার্কেটিং ক্যাম্পেইন না।
আগের মত বায়িং করি না, এখন কম করা হয় এখন বেশী পড়া হয় আইএমসি নিয়ে, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে, ইউএক্স নিয়ে, বিহেভিয়ার প্যাটার্ন নিয়ে, কন্টেন্ট ফানেলিং নিয়ে আর বিজনেস স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। দুনিয়ার দারুন দারুন সব কাজ আর তার পেছনের রহস্য। মজার ব্যাপার হল আমি টাটা গ্রুপের সেই মানুষটিকে নিয়ে বেশী এক্সাইটেড ছিলাম আর তাকে নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখেছি টাটা তার মার্কেটিং টিমকে কতটা স্বাধীনতা দেয় কাজ করার জন্য এই জন্য টাইটান আর টানিসক—এই নিয়ে গল্প আরেকদিন বলবো।
সেদিন দেশের একজন বেশ নামকরা ইকমের মালিক বলছিলো Brand Awareness ক্যাম্পেইন কেন রান করেন আর যদি করেন ই তাহলে কি স্ট্র্যাটেজি ফলো করেন? আমার কথা হচ্ছে সাঁরা দুনিয়ার মেটাতে যত এড চলে তার ৭০% হয় ভিডিও ভিউজ আর Brand Awareness এ- আমাকে বলেন তাহলে কেন এত হয়?
Brand Awareness করার একটা ওয়ে আছে সেটা কি? AIDA মডেলের প্রথম ধাপ হচ্ছে “A” মানে Awareness কিন্তু এই Awareness এর ৫টি অবস্থা আছে যেটা জানা আপনার ব্র্যান্ডের জন্য অনেক দরকারি হবে কারন ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন তাহলে কোন টোনে যাবে কিংবা কোন মিডিয়া কিভাবে ইউজ করতে হবে আপনি সেটা খুব সহজে বুঝতে পারবেন।
কি সেই ৫টা অবস্থা?
১। Unware: মানে হচ্ছে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স জানেই না যে তার একটা প্রব্লেম আছে কিংবা সে প্রব্লেমটাকে জীবনের একটা অংশ মনে করেই পার করে দিচ্ছে কিন্তু আপনি জানেন এইটা একটা প্রব্লেম যা ঘুমিয়ে আছে। সো আপনার প্রোডাক্ট যদি এই স্টেজের অডিয়েন্সকে টার্গেট করতে চায় তাহলে পন্যকে না , প্রব্লেমকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।
২। Problem Aware: তারা জানে তাদের একটা প্রব্লেম আছে কিন্তু সেই প্রব্লেমের সল্যুশন কি সেটা তারা জানে না। অর্থাৎ আপনি তাদেরকে পেইন পয়েন্ট চিনিয়ে দেবেন না, আপনি তাদের পয়েন্ট জানেন আর সেইটার কতগুলো সল্যুশন আছে তা নিয়ে যাবেন তাদের কাছে।
৩। Solution Aware: এইখানে টার্গেট মার্কেট জানে বাজারে সল্যুশন আছে কিন্তু তারা কার কাছ থেকে সল্যুশন নিবে, কার কি ইউএসপি এইগুলো জানে না , মানে আপনার কাজ হচ্ছে এইখানে নিজেকে অন্যান্য কম্পিটিশনের চেয়ে নিজেকে আলাদা প্রমান করা।
৪। Product Aware: এই স্টেজে মার্কেট আপনার পন্যকে চেনে এবং জানে কিন্তু আপনাকে নিয়ে তার ডিটেইল জানা নেই। কিংবা বলতে পারেন আপনার থেকে যে ও কিনবে সেই কনফিডেন্স ওর নাই।
৫। Most Aware: এই স্টেজে উপরের সবগুলো নলেজ লেভেল ও পার করে আসছে , ও প্রব্লেম জানে, সল্যসুশন জানে, আপনাকে চিনে এবং আপনাকে মানেও, এখন লাগবে ট্রিগার করার মত কিছু যেটা ওকে কিনতে বাধ্য করে।
উপরের এই ৫টা ধাপ আপনার নেক্সট Awareness Objective রান করার আগে একটু মিলিয়ে নেবেন এবং সেই অনুযায়ী সব ধরনের কন্টেন্ট, মিডিয়া, অফার – মোদ্দাকথা কম রুট ডিজাইন করবেন।
লিখেছেন, শেখ পিয়াস ইসলাম
সিনিয়র ম্যানেজার, ব্রান্ড এন্ড ডিজিটাল, নগদ
[লেখককে ফেইসবুকে ফলো করুন]