ছোট্টবেলায় আমরা সবাই কমবেশ পড়েছি, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বৈধ সকল কর্মকান্ডকে ব্যবসা বলা হয়। অনেক পুরুষদের মনে মনে কিন্তু সুপ্ত বাসনা হিসেবে নিজের একটা ব্যবসায়ের কথা মাঝেমধ্যে মাথায় আসে। কেউ এক্সিকিউট করতে পারেন, কেউ বা পারেন না।
ব্যবসায়ের কথা আসলেই চলে আসে মুনাফা অর্জনের কথা। যে ব্যবসায়ে মুনাফা নেই সেটি কেবলই একটি দাতব্য সংস্থা। সকলেই চায় মুনাফা অর্জন করতে। এজন্য সবাই চেষ্টা করে বিজনেস গ্রো করতে। বিজনেস গ্রো করলেই প্রফিট আসতে শুরু করে এই ধারণা সুপ্রাচীন হলেও মূলত এটি একটি ভুল কনসেপ্ট।
তাবৎ বিশ্বের যত বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে তাদের সকলেই দিনের পর দিন বিজনেস গ্রো করে গেলেও প্রফিটের মুখ দেখেনি। ধারাবাহিকভাবে ব্যবসা করে যাওয়াতে অনেকদিন পর এসে ঠিকই প্রফিট জেনারেট করতে পেরেছে। আবার অনেকেই বিভিন্ন পারিপ্বার্শিক কারনে যুগের পর যুগ ব্যবসা গ্রো করেও হাতে হাড়ি নিয়ে পথে বসে গেছে।
বাংলাদেশের MFS জায়ান্ট বিকাশের কথা চিন্তা করুন। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে ২০২০ সালে প্রফিট জেনারেট করে। অথচ তাদের সার্ভিস চার্জ অনেক। কিন্তু তারা মার্চেন্ট ও মার্কেটিং এর পেছনে প্রচুর পরিমাণে ইনভেস্ট করেছে। এর ফলে তারা এখন সকলের মাঝেও অধরা একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে গিয়েছে।
উবার, সহজ, পাঠাও ইত্যাদি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান যখন যাত্রা শুরু করে তখন দিনের পর দিন কুপন দিয়ে গ্রাহক একুইজেশনের চেষ্টা চালিয়ে গেছে। উবার ও পাঠাও টিকে গেলেও শেষ পর্যন্ত “সহজ” কিন্তু মার্কেটে টিকে থাকতে পারেনি। একেবারে হাওয়া হয়ে গেছে। ধুঁকে ধুঁকে অন্যান্য সার্ভিসের মাধ্যমে নিভু নিভু প্রদীপের ন্যায় টিকে আছে কোনো রকম।
ফুডপান্ডাও তাদের যাত্রার শুরুর দিকে প্রচুর কুপন কোড দিলেও করোনায় তাদের ব্যবসায় বিশাল এক বুস্ট হয়। তারপর থেকে আর কুপন না দিলেও মানুষজন এখন অনলাইনে খাবার অর্ডারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই ফুডপান্ডাকে আগের মত কুপন কোড দিতে হয় না। তারা বুঝে গেছে, এখনই তাদের আয়ের সময়। যদিও তারা এখনো প্রফিটের মুখ দেখেনি।
হাঙরি নাকি ফুডপান্ডার মত একই বিজনেস হলেও তারা ফরেন ইনভেস্ট পেয়েও নিজেদের তল্পিতল্পা গোটাতে বাধ্য হয়েছে। কারণ তারা বুঝতে পারেনি, এখনো তাদের ইনভেস্টমেন্ট পর্যায় থেমে যায়নি। আইয়ের সময় এখনো আসেনি। ইনোভেশনের ধাপ এখনো তারা অতিক্রম করেনি।
দারাজের ব্যাপারে কিছুদিন পর পরেই শোনা যায় অমুক তমুক একুয়ার করে নিয়েছে। দারাজ এখন পর্যন্ত প্রফিটে নেই। তারা প্রচুর পরিমাণে ইনভেস্ট করে যাচ্ছে। ebay মডেলে এগিয়ে যাচ্ছে। তবুও কিন্তুয় তারা দেশের এক নাম্বার ই কমার্স প্লাটফর্ম।
ইভ্যালির কথা একেবারে না বললেই না। একগাদা অফার দিয়ে বিজনেস গ্রোথ করার চেষ্টা করলেও তারা কখনোই প্রফিটে আসতে পারেনি। যদিও তাদের অস্বাভাবিক বিজনেস মডেল একটি স্ক্যাম ছিলো। বর্তমানে তারা সরকারি বিধি নিষেধ মেনে যেভাবে ব্যবসা করছে আমরা আশা রাখতে পারি, সকল ক্ষতিগ্রস্থ ক্রেতারা তাদের পাওনা বুঝে পাবেন।
পেপার ফ্লাই ফরেন ইনভেস্টমেন্ট পেয়েছিলো। খরচও করছিলো বেশ রকম। তবে তারা গ্রো করতে পারছিলো না। অবশেষে প্রফিটের মুখ না দেখেই তাদেরকে বিদায় নিতে হলো।
বিজনেস গ্রোথ আর প্রফিটিবিলিটির ব্যাপারটায় একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। বিজনেস গ্রোথের সময় আপনাকে বুঝতে হবে কোথা পর্যন্ত আপনাকে যেতে হবে। আবার ঠিক কোথায় গিয়ে আপনাকে থামতে হবে। যে যত ভালোভাবে এই বিষয় আয়ত্ব করতে পেরেছে তার জন্য তত ভাল ব্যবসা করা সম্ভব হয়েছে।
চ্যাট জিপিটির কথা ভাবুন। প্রথমে তারা ছিলো ০ অর্থের একটি প্রতিষ্ঠান। এরপর তারা ফান্ড রেইজ করেছে। ইনভেস্টরদের প্রটোটাইপ দেখিয়েছে। সবাইকে ফ্রি ভার্সন ব্যবহার করতে দিয়েছে। মার্কেটে যখন সবাই এর উপকারিতা বুঝতে পারলো তখন এর শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকলো। এবার চ্যাট জিপিটি ইনভেস্টরদের বোঝালো, আমরা এখন আরো প্রজেক্ট করবো। ফলে আরো মানুষজন চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করবে। আর যারা চ্যাট জিপিটির ফ্রি ভার্সনে উপকার পেয়ে নিয়মিত ব্যবহার করছে তারা ঠিকই প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে কিনবে। এভাবেই তারা দিনকে দিন প্রফিট জেনারেট করে যাবে।
ফুটবল মাঠে যখন খেলা হয় তখন সব সময় প্লেয়াররা এটাকিং স্ট্র্যাটেজিতে খেলে না। মাঝেমধ্যে তাদেরকে ডিফেন্সিভ কৌশলে খেলতে হয়। ক্রিকেট খেলায় টেস্ট ম্যাচে ব্যাটসম্যান ক্রিজে টিকে থাকলে রান হবে, আবার T20 ম্যাচে ক্রিজে কেবল টিকে থেকে কুতকুত খেললেই হবেনা। বল বাই বল আপনাকে রান করতে হবে। সুপার ওভারে ব্যাটসম্যানের ভূমিকা থাকবে আগ্রাসী। তাদের একেকটা শটে মাঠ চলে যাবে বলের বাইরে।
আপনাকে বিজনেসে প্রফিট করতে হলে বিজনেস গ্রোথ করতে হবে। বিজনেস গ্রো করলেই সাথে সাথে প্রফিটের চিন্তা করলে হবেনা। আবার দিনের পর দিন ইনভেস্ট করলেও হবেনা। আপনাকে শুরু করাও জানতে হবে, শেষ করাও বুঝতে হবে।