“Creator Economy” কিংবা আমাদের দেশের “Influencer Marketing” যাই বলেন এটা এখন বেশ প্রচলিত শব্দ। অনেকেই শুরুতে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কন্টেন্ট Consume করলেও এখন মোস্ট মানুষ ভাবে “ আমিও তো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে পারি”- এটা কিন্তু ভুল ইচ্ছে পোষন না মোটেও, বরং এটাই স্বাভাবিক।

আমি মনে করি প্রতিটা মানুষের নিজস্ব একটা জায়গা আছে কন্টেন্ট ক্রিয়েট করার, সেই কন্টেন্ট কোন ইনফ্লুয়েন্স করবে কিনা সেটা পরের ব্যাপার কিন্তু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কিংবা কন্টেন্ট ক্রিয়েট আপনি করতেই পারেন।

এবার কথা হচ্ছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কত প্রকার আর কার কি কাজ, কে কিভাবে কি করে?

১। Entertainment Based Content Creator: তারা সাধারনত আপনাকে বিনোদন দেবার জন্য কন্টেন্ট তৈরি করবে, মানে আপনি তাদের কন্টেন্ট দেখার জন্য রেগুলার টাইম বের করবেন কম , আপনি তাদের কন্টেন্ট উপভোগ করবেন আপনার অবসরে। তবে তাদের আপিল ম্যাস অডিয়েন্সের কাছে, আর এই সেকশনে ক্রিয়েটর হওয়া কিছুটা সহজই তাই তামাম দুনিয়ার বেশিরভাগ ক্রিয়েটর এই নিশে কাজ করে।

২। Education Based Content Creator: এই ধরনের ক্রিয়েটররা কোন বিশেষ বিষয়ে এক্সপার্ট থাকে আর তারা সেই বিষয়ে কন্টেন্ট তৈরি করে থাকেন। তাদের মার্কেট অনেক নিশ মানে উপরের এন্টারটেইনারের মত তাদের ফ্যান বেইজ এত বড় হবে না, তবে তাদের কন্টেন্ট রিলিজ হলে মানুষ সেভ করে রাখে, তাদের কন্টেন্ট মানুষ বেশ সিরিয়াস ভাবেই দেখে কারন এই ধরনের কন্টেন্ট কঞ্জিউমের সময় অডিয়েন্স একটা লার্নিং মুডে থাকে। তাই এই ধরনের কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের ইনফ্লুয়েন্স বেশ ভালো থাকে, তারা চাইলে বেশ কিছু দারুন কাজ করতে পারে। বাইরের দেশে এদের ডিম্যান্ড সব চেয়ে বেশি, তবে সেটা দেখা যায় না। আমাদের দেশে এই নিশে ক্রিয়েটর প্রথমে কম ছিল কিন্তু এখন বাড়ছে- তবে এই ক্যাটেগরির মধ্যে আরও কিছু সাবনিশ বের করা যাবে।

৩। Edutainer- Content Creator: এদের আমি ইউনিকর্ন বলি। মানে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দুনিয়ায় এরা হচ্ছে ইউনিকর্ন। এরা এডুকেশন এমনভাবে ইঞ্জেক্ট করেন মানে আপনি ইনফো নিচ্ছে এন্টারটেইন্মনেটে ফরম্যাটে। এরা ইনকাম সুযোগ অনেক বেশি থাকে যদি তারা শুরু থেকেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তার ব্র্যান্ড টোন।

এখন কথা হচ্ছে কন্টেন্ট মানে কি শুধুই ভিডিও? না কন্টেন্ট মানে শুধুই ভিডিও না, লিখাও কন্টেন্ট যেমন আমাদের আরিফ হোসেন ভাই লিখা দিয়েই কিন্তু একজন সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট, আবার পডকাস্ট দিয়ে দেশের বাইরে অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আছে, তবে সত্য বলতে ভিডিও সব চেয়ে সহজে আর হিউম্যান ব্রেইনের জন্য বেশ আরামদায়ক বলে ভিডিও কন্টেন্ট সহজে কাজ করে।

তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি যদি আপনি ডিসাইড ই করেন যে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে যাবেন তবে ভিডিও, আর্টিকেল, পডকাস্ট – ৩টা জিনিস নিয়েই কাজ করবেন। মানে ৩০ দিনের কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার করলে ভিডিও থাকে ১০টা, সেই ১০টা ভিডিও এর মধ্যে টাইপ থাকবে, বাকি ২০ দিনের মধ্যে পোষ্ট থাকবে ১০টা, স্ট্যাটিক থাকবে ১০টা- মানে শুরু থেকে আপনাকে একটু বেশি ফ্রিকুয়েন্সিতে কন্টেন্ট দিতে হবে (এইটা ম্যান্ডাটরি না যদিও কারনে এখানে অডিয়েন্স ইস্যু আছে, বেশি কন্টেন্ট দিতে গিয়ে আপনি কোয়ালিটি ফল করতে পারেন)

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে হলে ধরেই নিবেন এটা একটা বিজনেস, শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য। আপনি যতক্ষণ নিজের মনের মধ্যে এই ভাবনা না আনতে পারবেন ততদিন আপনি আপনার নিজের কনটেন্টে ভালো কোয়ালিটি নিয়ে আসতে পারবেন না।

কোন প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট বানাবো?

দেখুন কন্টেন্ট কোন প্ল্যাটফর্মে বানাবেন সেটা ডিপেন্ড করবে আপনি কোথায় থাকেন মানে আপনার জিও কি? দেন আপনার টিজি কারা, আর আপনার কন্টেন্ট কি পারপাস সারভ করছে। আমি বলবো, সবগুলো মিডিয়াতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন শুরু থেকেই- মানে ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক – সবগুলো। এক একটি মিডিয়া এক এক ধরনের কন্টেন্ট এডাপ্টেশন নিয়ে কাজ করবেন।

ব্র্যান্ড কোলাবঃ

এই পার্টটা আমার ব্র্যান্ড মার্কেটিং ভাই ব্রাদারদের জন্য। আমার নিজের একটা পুরান লিখা আছে , ইন্ডিয়ান কন্টেন্ট ইন্ডোরস্মেন্ট নিয়ে। লিখাটা আবার এখানে দিলাম যাতে পরের ধাপে যেতে ইজি হয়। একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যার ইউটিউবের ফলোয়ার আছে ১৩ মিলিওন। কোন ভিডিও আপ করলেই ৩ দিনে ৫ মিলিওন ভিউস আসে আর ১ মাসে ঐ ভিডিও ৮ থেকে ৯ মিলিওন টাচ করে।

তো ঐ ক্রিয়েটর মাসে ৬-৭ টা কন্টেন্ট দিয়ে থাকে। একটা ডিজিটাল ব্র্যান্ড যার প্রোডাক্ট হচ্ছে ডিজিটাল সে ঐ ক্রিয়েটরের সাথে পার্টনারশীপে গেলো , কি সেই পার্টনারশিপ ? একটা স্পেসিফিক মাসে তাকে ১০ টা কন্টেন্ট বানাতে হবে। তার নামে একটা কুপোন কোড থাকবে। যেই কুপোন দিয়ে পারচেজ করলে ২০% ডিস্কাউন্ট থাকবে।

এই ১০টা কন্টেন্ট এর জন্য ক্রিয়েটরকে ৫০ লাখ দিতে হবে আর প্রতি রেফার সেলসে মানে তার কুপোন ইউজ করে সেলস হলে ১৫ টাকা দিতে হবে।

রেজাল্ট??

১০টা কন্টেন্ট থেকে টোটাল ভিউ ছিল ৯৭ মিলিওন ২৫ দিনে। কুপোন থেকে পারচেজ ছিল ০.১% মানে ৯৭,০০০ ইউনিটস আর ডিস্কাউন্ট এর পরে মূল্য ছিল ৩৯৯ টাকা। তার মানে ব্র্যান্ডের ইনকাম ছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখস (একটু এদিক ওদিক)। ঐ ক্রিয়েটরের ইনকাম = ৫০ লাখ+ ১৪ লাখ

এরপর ঐ ব্র্যান্ড এমন ক্রিয়েটর আরও ৫ জনের সাথে পার্টনারশীপ করলো। ঐ ৫ জনের থেকে সেলস আসলো সাড়ে ৫ কোটি (ক্রিয়েটরদের সব টাকা + সেলস কমিশন দিয়ে)।

মজার ব্যাপার হচ্ছে তারা এই ক্রিয়েটর ক্যাম্পেইন চালিয়েছিল ২ মাস আর এই ২ মাস তারা টুইটার, ফেবু আর গুগোলে কোন পেইড এড চালায় নাই।

ক্যাম্পেইনের পুরো কেস পড়ে বোঝাই যায় এইটা সাকসেসফুল ক্যাম্পেইন ছিল। কিন্তু সব প্রোডাক্টের জন্য ক্রিয়েটরের এই ক্যাম্পেইন যাবে না। এই প্রোডাক্টটাই ছিল ডিজিটাল আর যেই ক্রিয়েটরদের এঙ্গেজ করা হয়েছে তারা পুরো স্টোরি এমনভাবে টেলিং এ ছিল যাতে আপনার কিনতে ইচ্ছে করবে।

এখানে আরও একটা ব্যাপার ছিল ক্রিয়েটরের পারসোনালিটি এর সাথে পন্যের পারসোনালিটি মিলে যাওয়া আর এখানে ৬ জন ক্রিয়েটর ই ইনফ্লুএন্স করার ক্ষমতা রাখে মানে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মানেই ইনফ্লুএয়ন্সার না (যদিও আমাদের দেশে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আর ইনফ্লুয়েন্সারদের এক নজরে দেখা হয়)।

ক্রিয়েটর ক্যাম্পেইনে ডিজাইন বেশ ট্রিকি একটা জিনিস , সব পন্যের সাথেই এই জিনিসকে মেলানো খুব কঠিন তবে মেলানো যায়।

ব্র্যান্ডের নাম কিংবা ক্রিয়েটরের নামটা বলতে চাচ্ছি না, আমি বেসিক্যালি একটা জিনিসের কারনে এই পোস্টটা করেছি আর সেটা হচ্ছে স্ট্র্যাটেজি। তবে ব্র্যান্ড আর ক্রিয়েটর দুইটাই ইন্ডিয়ান। তবে পেইড মিডিয়াতে তাদের ১টা ক্যাম্পেইন চলে আর সেটা হচ্ছে নিউ একুইজিশন। এইটা তারা অফ করে নাই।

Every Marketing Campaign Needs Two Objectives based on the Business Objective.

বাংলাদেশে এখন অব্দি যত ক্রিয়েটর ক্যাম্পেইন হচ্ছে তা আসলেই ভিউ বেইজড, কিন্তু ভিউ বেইজড ব্যাপারটা শুরুতে ঠিক থাকলেও এখন আসলে আরওআই টা হিসেব করতে হচ্ছেই। তবে আরওআই মানেই এই না যে সেলস , কন্টেন্ট আরওআই আসলে মেজারের নতুন প্যারামিটারও সেট করতে হবে।

লিখেছেন, শেখ পিয়াস ইসলাম
সিনিয়র ম্যানেজার, ব্রান্ড এন্ড ডিজিটাল, নগদ
[লেখককে ফেইসবুকে ফলো করুন]