নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চাইলে অনেকে এজেন্সি বা ডিজিটাল মার্কেটার কে নক করে। কিন্তু তারা ভেবেই নেয় সেটার মার্কেটিং ফেসবুকের মাধ্যমে হবে।

অথবা অনেকে ব্যাবসার পরিচালকরা ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে ফেসবুকে এড দেয়া কেই বুঝে থাকেন।

মুলত বিষয়টা শুধু ফেসবুকেই সিমাবদ্ধ নয়।

তাহলে এটাকে কিভাবে ডিফাইন করা যায়, যে ব্যবসার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চাইলে কিভাবে শুরু করা যায়।

এটার উত্তর একজন ডিজিটাল মার্কেটার আপনাকে ভাল দিতে পারবে। কিন্তু তারপরেও আপনার কিছু জিনিষ জেনে রাখা উচিত। তাহলে সঠিক ভাবে কাজ হচ্ছে কিনা আপনি বুঝতে পারবেন।

মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম সিলেকশন করা হয় মুলত প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কে কেন্দ্র করে। সার্ভিস বা প্রোডাক্টটির সাথে সংশ্লিষ্ট অডীয়েন্স বা কাস্টমার যেখানে বেশি থাকে, এঙ্গেজ বেশি করে; সেটাই মুলত আপনার প্রফিটেবল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।

এখন কথা হচ্ছে কি ধরনের স্ট্রাটেজি থাকবে। অথবা অন্য কারো স্ট্রাটেজি ফলো করা যাবে কিনা ?

স্ট্রাটেজি এর বিষয় চলে আসলে অনেক গুলো পয়েন্ট চলে আসে। সেটা সার্ভিস বা প্রডাক্টের ধরনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারবঃ

“আপনি যেটা দেখেন বা বলেন; সেটা মার্কেটিং নয়, যেটা অডিয়েন্স অনুভব করে সেটাই ডিজিটাল মার্কেটিং।”

অর্থাৎ আপনার স্ট্রাটেজিটা পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনি আপনার অডীয়েন্স কে কিভাবে বোঝাতে পারবেন, কনভিন্স করাতে পারবেন। চিরাচরিত কোন নিয়মে করতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এবার কাউকে ফলো করতে পারেন, তবে দেখবেন তার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা কেমন; এবং ভাল হলে সেটা কত দিন ধরে স্ট্যাবল।

তাদের বাজেট এর সাথে আপনার বাজেট ম্যাচ করে কিনা।

যদি ভাল হয় তবে সেটা ফলো করতে পারেন কিন্তু এটা আপনাকে বুঝতে হবে;

“সে ঠিক যত দিনে সফল হয়েছে আপনার তার থেকে বেশি দিন সময় লাগবে এবং তার থেকে বেশি এফোর্ট দিতে হবে, স্পেন্ডিং ও বেশি হবে।”

কারন সে যখন শুরু করেছে সেটা তখন অডীয়েন্সের কাছে নতুন ছিল, আর আপনি যেটা ফলো করে করবেন সেটা কিন্তু আপনার অডীয়েন্সের কাছে নতুন মনে হবে না।

তবে আপনার এফোর্ট যদি আপনার কম্পিটিটির থেকে বেশি ভাল হয় তবে আপনার রেজাল্ট আসবে দ্রুত।

তাহলে ব্যবসার বা প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল মার্কেটিং এর শুরুতে কি ফেসবুক বাদ দিয়ে অন্য কোন প্ল্যাটফর্মে শুরু করবো ?

উত্তর টা আসলে হবে, না।

আপনাকে আগে ফেসবুকেই শুরু করতে হবে। কারন ফ্যাক্ট বা ডাটা তাই বলে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কে পরিচয়য় করিয়ে দেয়ার জন্য ফেসবুকের বিকল্প বা এর মত এত বেশি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম দ্বিতীয় টা হয়ে উঠে নি।

কিন্তু ফেসবুকে মার্কেটিং করে তো অনেকেই হতাশ বা আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছে না, কেন ?

এর কারন হল, ফেসবুকে মানুষ কোন সার্ভিস নিতে আসে না, কিনতেও আসে না।

তাহলে অনেকে তো ফেসবুক থেকেই সফল হয়েছে ?

হ্যা হয়েছে, এর কারন তারা তাদের পেজের সাথে অডীয়েন্সের সাথে এমন একটা এঙ্গেজমেন্টে জেতে পেরেছে, সময় নিয়েছে; যাতে একটা সময় অডিয়েন্স সে পেজের সেলস প্রমোশনে ইন্টারেস্টেড হয়ে কনভার্সনে গিয়েছে। কারন একজন গ্রাহক একটা সার্ভিস বা প্রোডাক্ট কিনতে একটা সময় নিয়ে থাকে। এর ভিতরে তার সামনে আপনার প্রতিষ্ঠান কে বার বার নিয়ে আসতে পারলে সে একটা পর্যায় পার্চেজ বা সার্ভিস গ্রহন করবেই।

এর অর্থ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাফল নিয়ে আসতে কম করে ৬ মাস সময় লাগবেই। আর সেটা যদি সার্ভিস হয় তবে এটা মিনিমাম হলেও ধরে রাখতে হবে।

প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে বা কিছু নির্দিস্ট সার্ভিস এর ক্ষেত্রে এটা কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে। আপনার সার্ভিস ফি বা প্রোডাক্ট এর প্রাইজ যত বাড়বে আপনার সময় ও তত বেশি লাগবে।

কিন্তু ফেসবুক থেকেই আপনাকে শুরু করে এর পরে প্রয়োজনীয় অন্য কোন প্ল্যাটফর্মে মার্কেটিং শুরু করতে হবে।

পরিচিতির জন্য বেস্ট হবে সোশ্যাল মিডিয়া।

আর আপনার মেইন প্ল্যাটফর্ম হওয়া উচিত যেখানে আপনার অডিয়েন্স সেই সার্ভিস বা পন্য নিতে যায়।

আর এই জায়গায় চলে আসে নিজের ওয়েবসাইট।

কেন ওয়েবসাইট?

কারন আপনি যে প্ল্যাটফর্মেই ডিজিটাল মার্কেটিং পরিচালনা করেন না কেন, ট্রাফিক যদি আপনার নিজের সাইটে ড্রাইভ করাতে পারেন তবে সেই অডীয়েন্স আপনার হয়ে গেল। এতে একটা সময় নিজের ওয়েবসাইট ই মার্কেটিং হিসেবে দাড়িয়ে যাবে। এছাড়া কিছু সার্ভিস প্রদান করতে ওয়েবসাইটের বিকল্প নেই।

এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের মার্কেটিং ওয়েবসাইট ছাড়া কখনো সম্ভব হয় না। যেটা আমাদের দেশে সেভাবে শুরু হয় নি।

যেমন কিছু জিনিষ সার্চ করে মানুষ খোজে, সেখানে আপনার গুগল সার্চ ক্যাম্পেইন ভাল কাজ করবে। যাতে সে সার্চ করেই আপনার ওয়েবসাইটে চলে আসতে পারে।

এখন আপনার সাইট যদি না থাকে তবে কিন্তু আপনি এই ধরনের ক্যাম্পেইন করতে পারছেন না।

আবার কিছু জিনিষ মানুষ পার্চেজ করে সেলিব্রেটি দের কথায় বিশ্বাস করে, সেখানে আপনাকে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং করতে হবে।

কিছু জিনিষ মানুষ কেনে দেখে শুনে। তার জন্য ফেসবুকে লাইভ ভিডিও, ইউটিউব ভিডিও মার্কেটিং করতে পারেন।

যদি অনলাইনে দেখে কেনার পসিবিলিটি না থাকে সেটার জন্য আপনাকে ইভেন্ট করতে হবে, লোকাল এক্সপো, মেলায় অংশ নিতে হবে;

আর সেই ইভেন্ট এর যোগ দেয়ার জন্য প্রচারনা চালাতে হবে অনলাইনে। মানে ডিজিটাল মার্কেটিং কে ঠিক কোন যায়গায় বা অবস্থান বুঝে কি কারনে ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা আপনাকে বুঝতে হবে।

এক কথায় আপনাকে পুরো বিষয়টার রেজাল্ট কনভার্সন এর জায়গাকে কেন্দ্র করেই মার্কেটিং প্ল্যান, মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম চুজ, মার্কেটিং পরিচালনা করতে হবে।

অথবা আপনার ডিজিটাল মার্কেটার বা এজেন্সি ঠিক ভাবে এটা করছে কিনা সেটা অন্তত খেয়াল রাখতে পারবেন।